ঢাকা, ০৫ মে রোববার, ২০২৪ || ২২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২১০

অ্যালার্জি চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৩:১৯ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

অ্যালার্জির কারণে ভুগতে হয় অনেককেই। অ্যালার্জির যন্ত্রণা ভুক্তভোগীরাই জানেন। অ্যালার্জি দূর করতে নানারকম চেষ্টা চলে। সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও অনেকেই খেতে পারেন না শুধু অ্যালার্জির ভয়ে। এতে আবার ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতায়। এটি দূর করা তবু যেন সম্ভব হয় না। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে সহজেই আপনি অ্যালার্জিকে দূর করতে পারবেন সারা জীবনের জন্য। চলুন জেনে নিই—

 

অ্যালার্জির লক্ষণ

একেকজনের কাছে অ্যালার্জির লক্ষণ একেক রকম। তবে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে চোখ ও ত্বক চুলকানো, হাঁচি, ভরাট নাক, গলা শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, এমনকি মূর্ছা যাওয়া। আমাদের শরীর রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করে। শরীরের এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ত্রুটি হলো অ্যালার্জি।

 

যার অ্যালার্জি আছে, তার শরীর রোগ-জীবাণুর পাশাপাশি ক্ষতিকর নয়—এমন বস্তুকেও ক্ষতিকর মনে করে এবং তার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্ষতিকর নয়—এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়। এ কারণে অন্যদের জন্য ক্ষতিকর না হলেও অ্যালার্জি আছে—এমন ব্যক্তির কাছে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, কিংবা গরুর মাংস ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়।

 

অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে

অ্যালার্জি কখনো পুরোপুরি দূর করা যায় না। তবে এর প্রকোপ কমানো যায়। যে বস্তুতে অ্যালার্জি আছে, তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকলেই অ্যালার্জিমুক্ত থাকা সম্ভব। রোগীভেদে একেকজনের একেক বস্তুতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। ধরুন—কারও রেশমি কাপড়ে অ্যালার্জি, তিনি রেশমি কাপড় পরবেন না। যার চিংড়ি মাছে অ্যালার্জি, তিনি চিংড়ি মাছ খাবেন না। কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি, সেটা রোগীকে মনে রাখতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই অ্যালার্জির হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

 

ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকেই ত্বকের অ্যালার্জিতে ভোগেন। ডাক্তার–বৈদ্য করে করে রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সুফল মেলার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যা অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে সুফল দিতে পারে—

 

টি-ট্রি অয়েল

ত্বকের অ্যালার্জিতে টি-ট্রি অয়েল দারুণ কাজ করে। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অনেক ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দেয়।

 

আপেল সিডার ভিনেগার

অ্যাপল সিডার ভিনেগারে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। ত্বকের চুলকানি কমিয়ে অ্যালার্জির প্রকোপ দূর করতে কাজ করে এই উপাদান। তবে ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যালার্জি আছে কি না। থাকলে ব্যবহার করা যাবে না।

 

নারকেল তেল

নারকেল তেলে থাকা ময়েশ্চারাইজিং উপাদান অ্যালার্জির থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। শুধু তা-ই নয়, নারকেল তেল অ্যালার্জিজনিত চুলকানি কমায়। একটি বাটিতে সামান্য নারকেল তেল নিয়ে কুসুম গরম করুন। যেখানে অ্যালার্জির লক্ষণ রয়েছে, সেখানে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে দিন। উপকার পেলে দিনে দুবার মাখতে পারেন।

 

অ্যালোভেরা জেল

ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় অ্যালোভেরা জেল। এটি ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। সতেজ অ্যালোভেরা সরাসরি ত্বকে লাগালেই উপকার পাওয়া যায়।

 

কোল্ড শাওয়ার

ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল ত্বকের জ্বালা এবং এলার্জি হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি শীতল ঝরনা আপনার রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত করতে সহায়তা করে এবং হিস্টামিন বেরোতে দেয় না। এটি অ্যালার্জির তীব্রতা এবং ত্বকের জ্বালাও হ্রাস করে।

 

চোখের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকের চোখে অ্যালার্জি হয়। উল্লেখযোগ্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকানো, চোখে ঘনঘন ময়লা জমা ইত্যাদি। চোখের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন—

 

গোলাপজল

গোলাপজল চোখের অ্যালার্জির প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করে। চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ৩ ফোঁটা গোলাপজল দিয়ে দিন। এতে যে ইনফেকশনের কারণে চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে, সেটি কেটে যায়। গোলাপজল দেওয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখুন। খোলা রাখলে তরলটি বেরিয়ে যাবে। তখন পুরোপুরি কাজ হবে না।

 

লবণপানি

এক গ্লাস পানি নিন। এতে ৩ চা-চামচ লবণ গুলে পানি ভালোমতো ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই পানিতে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে চোখগুলো ধীরে ধীরে মুছে দিন। এতে চোখে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি থেকেও আরাম মিলবে।

 

ঠান্ডা পানি

কথায় আছে পানির অপর নাম জীবন। চোখের অ্যালার্জির ক্ষেত্রেও ঠান্ডা পানি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। অ্যালার্জির কারণে চোখ ফুলে গেলে, লাল হলে বা চুলকালে বারবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।

 

আমলকী  মধু

আমলকী পাউডার করে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই পাউডারের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীর অ্যালার্জিমুক্ত থাকবে।

 

সায়েনি

সায়েনি এক ধরনের হার্ব। এটি অনেকটা মরিচের মতো দেখতে। সায়েনি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির পাশাপাশি টক্সিন রিলিজ করতেও সহায়তা করে। চোখের ময়লা দূর করতে এর ভূমিকা রয়েছে।

 

সানগ্লাস

যদি আপনার অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কোথাও বের হওয়ার আগে সানগ্লাস পরে বের হবেন। বিশেষ করে যেখানে বাস করেন, সেটি যদি ধুলাবালিপূর্ণ এলাকা হয়, তাহলে চোখকে ডাস্ট অ্যালার্জিমুক্ত রাখতে সানগ্লাসের জুড়ি নেই।

 

পরিচ্ছন্নতা

ঘর এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। যাতে ধুলাবালি না ওড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টিভি, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সামনে টানা বসে থাকবেন না। আর চোখ চুলকালে আঙুল দিয়ে রগড়ানো থেকে বিরত থাকুন।

 

ঠান্ডা অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

এখন শীতের সময়। অনেকেই এই শীতে ঠান্ডার অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীত ছাড়াও অনেকে সারা বছরই এ ধরনের অ্যালার্জিতে ভোগেন। এ থেকে মুক্ত থাকতে বা অ্যালার্জির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কিছু ঘরোয়া টোটকা মেনে চলুন—

 

পেয়ারা খান

পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে এই উপাদানটি দারুণ কাজ করে। পেয়ারার পাশাপাশি লেবুর শরবত অথবা লেবু চা খেলেও উপকার পাবেন।

 

ঘি-তে উপকার

ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে খাবারের সঙ্গে ঘি খেতে পারেন। বিশুদ্ধ ঘি সংগ্রহ করে একবার এক চা-চামচ ঘি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রহণ করলে ঠান্ডার সমস্যা কেটে যাবে।

 

কালিজিরা একটি মহৌষধ

কালিজিরা খেয়ে ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রাতের খাবারের সাথে কালিজিরা ভর্তা, অথবা ঘুমানোর আছে কালিজিরার বড়ি খান। উপকার পেলে নিয়মিত খেতে পারেন।

 

ঠান্ডার সমস্যায় মধু

গ্রামে এখনো ঠান্ডার চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা হয়। যাদের অ্যালার্জিজনিত ঠান্ডার সমস্যা কষ্ট দিচ্ছে, তারা দিনে দুই চা-চামচ মধু খেয়ে দেখুন, ঠান্ডার সমস্যা চলে যাবে।